কোভিড-১৯ সরাসরি হৃদযন্ত্রে আক্রমণ করতে পারে এবং মৃত্যু ও বেশি অসুস্থতার আশঙ্কা বাড়িয়ে দেয়। কোভিড-১৯ হৃদযন্ত্র বিভিন্নভাবে আক্রান্ত করতে পারে। যেমন-হৃদযন্ত্রের পেশির মারাত্মক প্রদাহে হার্ট ফেইলিউর হতে পারে বা হার্ট ফেইলিউরের মাত্রা বাড়াতে পারে। হৃদযন্ত্রের মাংসপেশির প্রদাহ ও একই সঙ্গে হৃদযন্ত্রের বাইরের আবরণী পেরিকার্ডিয়ামের প্রদাহ হয়। হার্ট অ্যাট্যাক, হার্ট ফেইলিউর, হৃদযন্ত্রের জীবন সংহারী অনিয়মিত হৃদস্পন্দন হতে পারে।
কোভিড ১৯-এ ব্যবহৃত ওষুধ, যেমন-হাইড্রোক্সিক্লোরকুইন ও এজিথ্রোমাইসিন এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে ইসিজিতে খারাপ ধরনের পরিবর্তন বা কিউটি সেগমেন্ট দীর্ঘায়িত হওয়া অথবা হৃদযন্ত্রের অনিয়মিত হৃদস্পন্দন হতে পারে। ভাইরাসের মাধ্যমে হৃদযন্ত্রের রক্তনালিতে কোনো ব্লক ফেটে হার্ট অ্যাট্যাক হওয়ার মতো ঘটনা ঘটতে পারে। কখনো কখনো হৃদরোগের এসব উপসর্গ কোভিড-১৯-এর মাধ্যমে নিউমোনিয়ার উপসর্গের সঙ্গে মিলে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে হৃদরোগ সংক্রান্ত পরীক্ষা করে তা পৃথক করা যায়। কার্ডিয়াক এনজাইম, যেমন-ট্রোপোনিন আই বা সিকেএমবি-এর পরিমাণ রক্তে বাড়তে পারে, হৃদযন্ত্রের মাংসপেশির প্রদাহ বা হার্ট অ্যাট্যাকের কারণে।
ইসিজিতে যেসব পরিবর্তন পাওয়া যায়, তার মধ্যে সবচেয়ে খারাপ, যেমনÑ এসটি সেগমেন্ট উপরে উঠে গেলে সেক্ষেত্রে রোগীকে ক্যাথ ল্যাবে নিয়ে এনজিওগ্রাম করলে দেখা যায়, অধিকাংশ ক্ষেত্রে হৃদযন্ত্রের করোনারি ধমনিতে ব্লকের মাত্রা সামান্য বা অতাৎপর্যপূর্ণ। তাই ধারণা করা হয়, ইসিজিতে এই এসটি সেগমেন্ট পরিবর্তন পেরিকার্ডিয়ামের প্রদাহের জন্য হতে পারে। তাই ইসিজিতে এসটি সেগমেন্ট ওপরে উঠলেও রোগীকে ক্যাথল্যাবে নেওয়ার আগে ভালোভাবে মূল্যায়ন করতে হবে।
টাইপ-১ হার্ট অ্যাটাকে যদি ক্যাথল্যাবের সব স্টাফের জন্য পুরোপুরি পিপিই পাওয়া যায় ও কোভিড ১৯-এর জন্য ডেডিকেটেড ক্যাথল্যাব পাওয়া যায়, তবে রোগীকে প্রাইমারি পিসিআই অর্থাৎ এনজিওগ্রাম করে বন্ধ হৃদযন্ত্রের করোনারি ধমনি খুলে দিতে হবে । আর এসব ব্যবস্থা না থাকলে রোগীকে থ্রমবোলাইসড্ করতে হবে অর্থাৎ রোগীর রক্তনালিতে জমাট বাঁধা রক্তের পি- গলানোর ওষুধ দিতে হবে। পেরিকার্ডিয়াল প্রদাহের ক্ষেত্রে স্টেরয়েড ব্যবহার সাবধানে করতে হবে। ইমিউন দশায় এটা লাভজনক কিন্তু ভাইরাল দশায় এটার ব্যবহার ক্ষতিকর।
তাই কোভিড ১৯-এ হৃদরোগ সংক্রান্ত জটিলতা প্রতিরোধ করাই সবচেয়ে উত্তম। এ ক্ষেত্রে প্রতিরোধের সবচেয়ে উত্তম পদ্ধতি হলো, রোগ নির্ণয়ে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পরীক্ষা করতে হবে। এতে চিকিৎসাও তাড়াতাড়ি শুরু করা যাবে। যে রোগী যত তাড়াতাড়ি চিকিৎসা শুরু করা যাবে, তত বেশি জটিলতা এড়ানো যাবে। হৃদরোগ সংক্রান্ত জটিলতার চিকিৎসার পাশাপশি কোভিড ১৯-এর প্রচলিত চিকিৎসাও চালাতে হবে ।
লেখক : হৃদরোগ ও ওষুধ বিশেষজ্ঞ
Leave a Reply